সংহতি ও পূর্বকথা ( প্রসঙ্গ- বাংলা কবিতা উৎসব ২০০৮)

–  ফারুক আহমেদ রনি

সংহতি সাহিত্য পরিষদ। প্রতিষ্ঠিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্নে নামটা ছিল সংহতি সাহিত্য সংস্থা।  কেন জানি সংস্থাকে বাদ দিয়ে পরিষদ করা হয়েছে, তার যৌক্তিক কারণ দাড় করাতে পারবোনা। সংহতি তার জন্মলগ্ন থেকে বিলেতের বাংলা সাহিত্যে সরব ভূমিকা পালন করে আসছে। অনাবশ্যক কারণে সংহতির কার্যক্রম কিছু দিন ব্যাহত হয় ঠিকই কিন্তু এবারের বাংলা কবিতা উৎসব যেন দুরন্ত করে তুলেছে সংহতি পরিবারকে। শুরু থেকেই সংহতি একটি নিরেট সাহিত্যের কাগজ বের করতে সক্ষম হয়, আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে সাহিত্যের কাগজ বের করার পেছনে কতটুকু শ্রম আর ত্যাগের প্রতি কঠোর হয়ে কাজ করতে হয়েছে সে বিচারে বিলেতের কবি ও সাহিত্যিকরা নির্দ্বিধায় সাক্ষী দেবেন। সংহতি শুধু সাহিত্যের কাগজ বের করেনি, প্রকাশ করেছে সংহতি কবিতা সংকলন এবং সম্পাদনা করেছে বিলেতের কথা সাহিত্যিকদের গল্প নিয়ে সর্বপ্রথম গল্পগ্রন্থ।
শুধু তাই নয়, বিলেতে সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালে যে কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, সে উৎসবের উদ্যোক্তা ছিল সংহতি পরিবারের সদস্যরাই। শুধু সংহতি সাহিত্য পরিষদের নামটা ছিল না। সেই সংগঠনের নাম ছিল সুরমা ইয়াং রাইটার্স গ্রুপ। আর সেই কবিতা উৎসবের আয়োজন ছিল বাংলাদেশে তখনকার সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামনে রেখে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সরাসরি পক্ষপাতিত্বের অঙ্গিকার। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সে অনুষ্ঠানের মুল শ্লোগান ছিল শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা আর সেখানে উপস্থিত ছিলেন অনেকের মধ্যে গণ মানুষের কবি দিলওয়ার, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, মাসুদ আহমেদ সহ বিলেতের কবি ও লেখিয়েরা। আজ থেকে ২১ বছর আগে যে পরিবারের সদস্যরা সাহিত্যের মাঠে জোয়াল কাঁধে চাষাবাদের বৃহত্তর দায়িত্ব নিয়েছিল আজো সেই সদস্যরা উপস্থিত এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য প্রতিশ্রুত। আমি যদি সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই আর আবিষ্কার করতে চেষ্টা করি বিশ-একুশ বছর আগের স্মৃতি আর জ্বলজ্বলে তারুণ্যে ভরপুর মুখাবয়বগুলো, মনে হবে যেন এখনও সেই ২১ বছর পূর্বের যায়গায় অবস্থান করছি। আমার এখনো স্পষ্ট মনে পড়ছে সে দিনগুলোর কথা। ১৯৮৮ সাল ইষ্ট লন্ডন কলেজের (বর্তমানে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কলেজ) ক্যান্টিনে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আব্দুর রকিব, নিশা ও স্বাধীন খসরু সহ কিছু সহপাঠীদের নিয়ে একটি সাহিত্যের কাগজ প্রকাশনার সিদ্ধান্ত নেই। যার সুদূর প্রসারী কর্মসূচী হিসাবে পরবর্তীতে সংহতি সাহিত্য সংস্থা নামে পূর্ণা ঙ্গ সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। সেই সংগঠনে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে ফারুক আহমেদ রনি ও স¤পাদক আবু তাহের সহ ১৭ সদস্যের প্রতিষ্ঠাতা কার্যকরী কমিটির মধ্যে ছিলেন আব্দুর রকিব, আব্দুল মুনিম ক্যারল, সৈয়দ তুহিন মোহাম্মদ, সৈয়দা নাজমিন আক্তার, ফারুক মিয়া, নজমুল ইসলাম লনিক, আব্দুল মালিক লুলু, শামছুল হক এহিয়া, হাসান তসদ্দিক রুহেল, মাশুক মিয়া আনাই (নাম পরিবর্তন করে এখন নজরুল আলম), রাফিয়া বেগম, সঞ্চিতা বেগম, নোমান চৌধুরী, নজরুল ইসলাম নজির, সেলিম উদ্দিন,আবুল হোসেন নজমুল প্রমুখ। তাছাড়াও  ক্রমান্বয়ে সংহতি পরিবারের সাথে সংপৃক্ত হোন অনেকেই তাদের মধ্যে দিলু নাসের, দিনার হোসেন, আমিনুল হক মুন্না, হিরণ বেগ, সাইফ উদ্দিন আহমদ বাবর, লোকমান আহমেদ, ইকবাল হোসেন বুলবুল, হাসি খান, এমদাদ তালুকদার উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে তখনকার সময়ে সংহতিকে নানা ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অনেকের মধ্যে প্রয়াত  শ্রী কমলেশ সমদ্দার, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে ব্রানডান সিরাঝ), মাহমুদ এ রউফ, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, প্রয়াত তাসাদ্দুক আহমদ ও রহমান জিলানী। তাসাদ্দুক আহমদ ও শ্রী কমলেশ সমদ্দার আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তাদের অনুপস্থিতিতে আজকের দিনে এই অনুষ্ঠানে শুধু নয় বাংলাভাষী কমিউনিটিতেও এক হৃদয়¯পর্শী  শুণ্যতা বিরাজ করছে। সংহতি আজীবন তাদের কর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও কৃতজ্ঞ।
সংহতি যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৮৮ সালে এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিলেতে সর্বপ্রথম মাসিক সাহিত্যের কাগজ প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়ে। সংহতি সাহিত্য পত্রিকাটি টানা কয়েক মাস প্রকাশনার পর আর্থিক টানাপড়েনের কারণে বিধ্বস্ত হয়ে পড়লে প্রকাশনার কাজ শুরু হয় ত্রৈমাসিক হিসাবে। কিন্তু তাও বেশি দিন আগলে রাখা যায়নি একই কারণে। তারপর সংহতি পর পর প্রকাশ করে কবিতা ও গল্প সংকলন। সাথে সাথে সংহতি নানা উৎসব ও বিশেষ বিশেষ দিনগুলো উপলক্ষ করে কবিতা পাঠের আসর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ও সাহিত্য সম্মেলন সহ নানা তৎপরতায় বিলেতের বাংলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে যথেষ্ট অবদান রেখে আসছে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে সংহতির বিশ বছর পূর্তি পালিত হবে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সংহতি আজ ২০ বছরের  টগবগে তারুণ্যের দীপ্তি নিয়ে নতুন মাত্রায় নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করেছে। সংহতি বিলেতের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যোগ করছে আরেকটি নতুন অধ্যায়, বাংলা কবিতা উৎসব ২০০৮, লন্ডন। সংহতি তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অভিপ্রায় নিয়ে প্রতি বছর বাংলা কবিতা উৎসবের আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সেই সাথে সংহতি পরিবারে যোগ হয়েছে এই প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল কিছু কবি ও সাহিত্যানুরাগী যাদের উদ্যম সংহতিকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে যথেষ্ট পরিপূরক।। কার্যকরই পরিষদে এবারে রয়েছেন ফারুক আহমদ রনি, আবু তাহের, ইকবাল হোসেন বুলবুল, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, হেলাল উদ্দিন, সামসুল জাকি স্বপন, নোমান চৌধুরী, আব্দুল মুনিম ক্যারল, ফরিদা ইয়াসমিন জেসি, মিতা তাহের, শামছুল হক এহিয়া, শামিম শাহান, সাঈম চৌধুরী, আমিনা আলী, খাতুনে জান্নাত, সেলিম উদ্দিন, নজরুল আলম আনাই, হাসান তসদ্দিক রুহেল, রেজওয়ান মারুফ, ফারুক মিয়া, সৈয়দা নাজমিন আক্তার, রাফিয়া বেগম, লোকমান আহমদ,  সৈয়দা তুহিন মোহাম্মদ, সৈয়দা ফারজানা উদ্দিন, রওশনারা হেলাল, সুস্মিতা রায় ও নজমুল ইসলাম। আমরা যদি একটু পিছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখা যাবে বিশ বছর আগের ১৯৮৮ সালের প্রথম কার্যকরী পরিষদের প্রায় সকল সদস্যদেরই সরব উপস্থিতি এখনও লক্ষণীয়।

তৃতীয় বাংলার সাহিত্য সংগঠন
তৃতীয় বাংলা শব্দটি শুনে চমকে ওঠার আর কোন অবকাশ নেই। কারণ বিলেতে অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের এই জনপদে বাংলাভাষীদের ব্রিটিশ বাঙালী হিসাবে চিহ্নিত করা হলে আমাদের এই বাঙালী অধ্যুষিত ভূখণ্ডকে আজ আমরাই তৃতীয় বাংলা বলে পরিচয় করিয়ে নিয়েছি । আমরা এখন আর প্রবাসী নই। আমরা এখন বাংলাদেশ, পশ্চিমবাংলার পর পরই দাবী করছি তৃতীয় বাংলার বাঙালি বলে। আমাদের মাতৃভাষা এখনও বাংলা। ব্রিটিশ কারিকুলামে আমাদের বাংলাভাষা প্রতিনিধিত্ব করছে। বাংলাভাষা-সাহিত্যের সংযোজন এখন উর্বর করছে ইংরেজি সাহিত্য। প্রতি বছর আপডেট হচ্ছে, বাংলাভাষার নানা শব্দের সমারোহে সমৃদ্ধ হচ্ছে ইংরেজি ভাষার অভিধান ।
বিলেত বা তৃতীয়বাংলার এই ভিন্নভাষী জনস্রোতে দ্রুত বাংলা ভাষার প্রসার লক্ষণীয়। তার প্রমাণ বিলেতের বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রায় এক ডজন সাপ্তাহিকী ও মাসিক পত্রিকা। তাছাড়া রয়েছে সাহিত্য সাময়িকী ও সাহিত্যের ছোট কাগজ।
বিলেত থেকে অনেক গুলো বাংলা সাহিত্য সাময়িকী, সাহিত্যের কাগজ প্রকাশনার ইতিহাস দীর্ঘদিনের, তার মধ্যে হিরণ্ময় ভট্টাচার্য সম্পাদিত ত্রৈমাসিক সাগর পারে থেকে শুরু করে অভিমত, সংহতি, শিকড়  ও তৃতীয়ধারা পর্যন্ত, তিন যুগের ব্যবদান। আর এই তিন যুগ সময়ে অনেক সাহিত্যের কাগজ, সংকলন প্রকাশিত হয়েছে এবং তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। বিশেষ করে তৃতীয় বাংলার সাহিত্য ভাণ্ডারকে প্রসারিত করার লক্ষে শব্দপাঠ পরিবার একটি মাইল ফলক হিসাবে কাজ করছে। সাহিত্যের ছোট কাগজ হিসাবে প্রকাশিত শব্দপাঠ একটি শক্তিশালী সাহিত্যের কাগজ, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে মাত্র ৩২ পৃষ্ঠা, ২ ফর্মার একটি সংকলন হিসাবে। স¤প্রতি প্রকাশিত সর্বশেষ শব্দপাঠ-এর ব্যাপ্তি ৪৪৮ পৃষ্ঠা অর্থাৎ ২২ ফর্মায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। শব্দপাঠ নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী জায়গা করে নিতে পেরেছে তৃতীয় বাংলার কবিদের হৃদয়-প্রাণে। ছোট কাগজের মধ্যে ভূমিজ, কবিতাপত্র ও আদি কাকতাড়ু-য়ার মত প্রকাশনা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে যথেষ্ট অবদান রাখছে।
বিলেত কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্য সংগঠন হিসাবে সর্বপ্রথমে বাংলা সাহিত্য পরিষদের নামটি উল্লেখ করতে হয়। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির কার্যক্রম অতি ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হলেও খুবই দ্রুত তার ব্যাপ্তি প্রসারিত হতে থাকে। পর পর কয়েক বছর সাহিত্য সম্মেলন ও বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে সাহিত্য পরিষদ একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলনগুলোতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলা, ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে উপস্থিত হয়েছেন বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি এবং সাহিত্যিক। তাদের অনেকের মধ্যে প্রয়াত কবি সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, প্রয়াত সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু গুণ, হাসান আজিজুল হক, ইমদাদুল হক মিলন সহ বাংলা সাহিত্যের বরেণ্যে ব্যক্তিত্ব।
বর্তমান সময়ে এসে হঠাৎ করে বাংলা সাহিত্য পরিষদের কর্মতৎপরতায় ভাটা পড়ে। তার কোন বিশদ ব্যাখ্যা আমার জানা নেই,   বাংলা সাহিত্য পরিষদের অনুপস্থিতি সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা বাংলা সাহিত্য পরিষদের সরব উপস্থিতি কামনা করছি।
বাংলা সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠা পাবার পর পরই রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিস নামে আরেক সংগঠনের জন্ম হয়। সৃজনশীল সাহিত্য চর্চার বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সাহিত্য সংগঠনটি দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত বাংলা সাহিত্যে তাদের অবদান রাখতে যথেষ্ট পরিশ্রম ও কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মুল কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সাহিত্য সভা, সেমিনার, স্মরণিকা, কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ ইত্যাদি।
উদীচী যুক্তরাজ্য বিলেতের বাংলা সংস্কৃতির প্রচার এবং প্রসারে রাখছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দীর্ঘ বিশ বছরের অভিযাত্রায় উদীচীর অর্জন অনেক। ট্রাফালগার স্কয়ার থেকে শুরু করে পূর্ব লন্ডন, বার্মিংহাম থেকে ম্যানচেস্টার সবখানেই উদীচী আছে এবং তার এই উপস্থিতি কেবলই সাধারণ উপস্থিত নয়, নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা তারা তাদের পরিবেশনায় স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দেয়।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে লন্ডনেও তার শাখা বিস্তৃত করেছে। লন্ডনে কেন্দ্রের পথচলা গৌরবদীপ্ত। বিলেতে বাঙালি সংস্কৃতির কোনও আয়োজনে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের উপস্থিতি যোগ করে ভিন্নমাত্রা। বৈশাখী মেলা থেকে শুরু করে পাঠচক্র, লেখক-পাঠকের মুখোমুখি, কবিতার আসর, সবখানেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র রাখে তার শক্তিময় উপস্থিতির স্বাক্ষর।
সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস নিজেদের মনে করে শিল্পিত বিপ্লবের অংশ। বিলেতের সাংস্কৃতিক জগতে এই সংগঠনটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে আছে। নাটক, সাহিত্য সভা, গান, নৃত্য, সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে এবং নতুনত্বের ধারা তৈরিতে সাধ্যমতো প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বিলেতে বাংলা বর্ণমালা ছড়িয়ে দিতে, নতুন প্রজন্মকে দেশের কবি ও কবিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে বিলেতের একদল প্রাণোচ্ছল তারুণ্যের দীপ্তিময় পদচারণার নাম কণ্ঠপ্রবাস। বিলেতের সং®কৃতি জগতে এখন পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ এই সংগঠনটি নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে সুধীমহলে।
চারণ সুস্থ সাহিত্য সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে রাখছে চমৎকার ধারাবাহিকতা। চারণের অবস্থান ব্যতিক্রম এবং ঝলমলেও। পাঠচক্র, সাহিত্য আসর থেকে শুরু করে নানা আয়োজনে সব সময়ই সরব থাকছে চারণের ভুবন।
কবি নজরুল সেন্টার, বিলেতের বাংলা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রেখে চলেছে তার আপন মহিমায় গৌরবান্বিত অবদান। শিল্পকলা, গান, নৃত্য, কবিতা আবৃতি সহ বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে নানা অনুষ্ঠান, কর্মশালা সহ প্রকাশ করে থাকে স্মরণিকা ও সংকলন। কবি নজরুল সেন্টার প্রতিনিয়ত উপহার দিচ্ছে বর্ণিল অনুষ্ঠান। নজরুল সেন্টার সরাসরি টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের ফান্ডে পরিচালিত।
বিলেতের বাংলা সাহিত্যের প্রসার কাজে নিয়োজিত অসংখ্য সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন কিন্তু এত স্বল্প পরিসরে সেই সকল সংগঠনের কর্মতৎপরতা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য সংহতি আয়োজিত কবিতা উৎসবে বিলেতের এইসব সংগঠনগুলোর অধিকাংশই থাকছে সুহৃদ সহযোগীর ভূমিকায়।

সংহতি‘র আয়োজনে বাংলা কবিতা উৎসব ২০০৮, লন্ডন
গত ১৪ মে ২০০৮, বিলেতে বোশেখী মেলাকে উপলক্ষ করে লেখক কবি বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মিলিত হই বিকলেনের ক্যাফে গ্রিল রেস্টুরেন্টে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আবু তাহের, ইকবাল হোসেন বুলবুল, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, আবু মকসুদ, নজমুল ইসলাম, রুপা চক্রবর্তী, চক্রেশ চক্রবর্তী, আহমেদ ময়েজ, সৈয়দ মবনু, আব্দুল কাইয়ুম, হেলাল উদ্দিন, সাঈম চৌধুরী, আমিনা আলী, আফরোজা আলীসহ অনেকে। সেদিন আড্ডা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ইকবাল হোসেন বুলবুল আর আনোয়ারুল ইসলাম অভি-ই প্রসঙ্গ নিয়ে আসে সাহিত্যের আসর করার এবং শিকড় (শিকড় প্রসঙ্গ পরে আসছে) সাহিত্য পত্রিকাটির প্রকাশনা আবার নতুন করে শুরু করার। রাস্তায় হাটতে হাটতে আমাদের শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে যায় কবিতা উৎসব করার।
বিলেতে বাংলা কবিতা উৎসবের যথেষ্ট তাগিদ অনুভব করেই সংহতি তার কর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই বাংলা কবিতা উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কবি দিলওয়ার, রফিক আজাদ, বেলাল চৌধুরী ও পশ্চিম বাংলা থেকে জয় গোস্বামীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কবি দিলওয়ার শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি, তবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর কালজয়ী অবদানের কথা বিবেচনা করে সংহতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় কবি দিলওয়ারকে নিয়ে স্বল্প পরিসরে হলেও অনুষ্ঠানে অন্তত ১০ মিনিটের ভিডিও ধারণকৃত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করার। আর সে উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করার লক্ষে সংহতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের প্রোডাকশনের একটি টিম নিয়ে সরাসরি সিলেট শহরের ভার্থখলার কবি-র বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেন। ধারণ করা হয় কবির বর্তমান সময়ের রোগ-পীড়ায় ক্ষয়ে যাওয়া দুস্থ শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা বাংলা সাহিত্যের চিরঞ্জীব,  চিরকুমার কবি দিলওয়ার-কে। কণ্ঠে তার সেই চিরায়ত অভিমানী, অমর বাণী..
পদ্মা সুরমা মেঘনা যমুনা..
অশেষ নদী ও ঢেউ
রক্তে আমার অনাদি অস্থি
বিদেশে জানেনা কেউ!
কবির প্রতি, কবির সাহিত্য কর্মের প্রতি আমাদের সম্মান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। আমরা তাঁর রোগ মুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
কবি জয় গোস্বামী লৌখনোতে একই সময়ে আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার প্রোগ্রাম আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে বলে তিনি ও উপস্থিত হতে পারেননি। তাছাড়াও বর্তমান সময়ের অনেক প্রতিশ্রুতিশীল কবি বন্ধুরা উৎসবে উপস্থিত হবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিশেষ করে আমেরিকা থেকে ফকির ইলিয়াস, হাসান আল আব্দুল্লাহ, কানাডা থেকে সাইফউল্লাহ মাহমুদ দুলাল, বাংলাদেশ থেকে মাহবুব হাসান, মাহবুব লীলেন, মুস্তাফিজ শফি, শিহাব শাহরিয়ার, মাকসুদুর রহমান মঞ্জু, আহমেদুর রশিদ এবং ফ্রান্স থেকে আমিরুল আরহাম। সর্বশেষে তাদের অনেকেই উপস্থিত থাকতে পারেনি বিভিন্ন কারণে। । যুক্তরাজ্য থেকে আমরা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম কবি ও লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরী, কেতকী কুশারী ডাইসন ও উইলিয়াম রাদিচে। উইলিয়াম রাদিচে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত না হতে পারলেও তাঁর অনুবাদ করা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা স্মারকগ্রন্থের জন্য আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন এবং গ্রন্থে ইংরেজি অনুবাদটি আমাদের বাংলাভাষার পাঠকদের জন্য সংযোজিত হলো।  বাংলা কবিতা উৎসব ২০০৮ উপলক্ষে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি রফিক আজাদ, বেলাল চৌধুরী, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী  ও কেতকী কুশারি ডাইসন। যাদের নামের সাথে কোন রকম বিশেষণ বা ভূমিকার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। বাংলা সাহিত্যে তাঁদের নামই এক একটি বিশেষণ।। বাংলা সাহিত্যের বিশাল আয়তনজুড়ে এক ফালি আলোকিত জ্যোৎস্নার অবয়ব নিয়ে উজ্জ্বল তাদের সাহিত্য কর্মের দীপ্তি। তাদের উপস্থিতি আন্দোলিত করেছে কবিতা উৎসবের আয়োজনকে। তৃতীয় বাংলার কবিদের হৃদয়-প্রাণ ছুঁয়ে অমিয়ধারায় প্রবাহিত বাংলা সাহিত্যের ত্রিভুজ মোহনা। সংহতি পরিবার এবং তৃতীয় বাংলার কবিদের পক্ষ থেকে অতিথি কবিদের জন্য প্রাণঢালা অভিনন্দন। তাদের কবিতা ও সাহিত্যের ফল্গুধারায় অবধারিত হোক আমাদের সাহিত্যাঙ্গন, কলুষ মুক্ত হোক এই তৃতীয় বাংলার বিভিন্ন ’বাদে’র বৈষম্যবোধ আর দুর হোক প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী লালিত তীক্ষ্ন ফলাধার বিষবোধ।

তাছাড়াও বাংলাদেশ থেকে কবিতা উৎসবে উপস্থিত হয়েছেন এই প্রজন্মের এবং বর্তমান সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল ও শক্তিশালী দু’জন কবি। কবি ও ছড়াকার সৈয়দ আল ফারুক এবং কবি, সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি। সৈয়দ আল ফারুক সত্বর দশকের শেষ ও আশির দশকের প্রথম দিকে কবিতা ও ছড়া সাহিত্যে নিজের কাব্যগুনেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হোন। সৈয়দ আল ফারুক সময়ের সিঁড়ি বেয়ে নির্দ্বিধায় প্রতিষ্ঠার প্র¯তুর চুড়ায় জায়গা করে নিয়েছেন অনেক আগেই। তাঁর ছড়া ও কবিতায় সমান  পরিচয় বহন করে।
মু¯তাফিজ শফি, লিখছেন নব্বুইয়ের দশক থেকে। যার লেখালেখির শুরু কবিতা দিয়ে। বাংলাদেশের সিলেট শহরের বিয়ানীবাজার উপজেলায়  নিজের জন্মস্থান থেকে যাত্রারম্ভ। জয়ের উল্লাস তাকে অল্প বয়সেই প্রেরণাদৃপ্ত করে, হাটি হাটি পা পা করে শুধু মাত্র একটি কলমকে সম্ভব করে জগতোন্মোচনে সহসা রেসের ঘোড়ার মত ছুটতে থাকেন।  তার ছোটা আর থামছে না…। এই প্রজন্মের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং পরিচিত নাম শফি, শফি কবিতার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছেন। তিনি  বর্তমানে সমকাল পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। আমরা তার উপস্থিতিও সান্নিধ্যকে পরম ভালবাসায় স্বাগত জানাচ্ছি। ।

সংহতি বাংলা কবিতা উৎসবকে গতিময় ও বিলেতের কবিদের সং¤পৃক্ত করার মানসে গত তিন মাস থেকে প্রতি রোববার মুক্ত আলোচনা ও মতামত সভার আয়োজন করে এবং আমরা যথেষ্ট সাড়া পাই। সে সভাগুলোর ফলপ্রসূ হিসাবে যথেষ্ট উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল লক্ষণীয় এবং প্রতিটি সভায় বিলেতের কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অসংখ্য সাহিত্যসেবী উৎসবকে সামনে নিয়ে সহযোগীতার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছুটে আসেন। তাদের অনেকের মধ্যে কবি ও সাহিত্যের ছোট কাগজ শব্দপাঠ-এর স¤পাদক আবু মকসুদ, সাপ্তাহিক  সুরমা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক আহমেদ ময়েজ, কবি গোলাম কবির, কবি কাদের মাহমুদ, কবি ও ছড়াকার দিলু নাসের, কবি আব্দুল কাইয়ুম, কবি মঞ্জুলিকা জামালী, কবি শাহ শামিম, কবি মজিবুল হক মনি, কবি শামছুল হক শাহ আলম, লেখক, সাংবাদিক আমিনুল হক বাদশা, কবি ও সংগঠক মোহাম্মদ আজিজ,  কবি সৈয়দ মবনু, প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার স¤পাদক বেলাল আহমদ, সাপ্তাহিক পত্রিকার স¤পাদক এমদাদ আহমদ চৌধুরী, কবি শামিম আজাদ, সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকার বার্তা স¤পাদক  মুছলেহ উদ্দিন আহমদ, চ্যানেল আই টেলিভিশন চ্যানেলের ব্যবস্থাপক রেজা আহমদ ফয়ছল চৌধুরী শোয়েব, বাংলা টিভি সংবাদ পাঠক নাজমুল হোসেন, সালাউদ্দিন শাহীন ও সায়েম খন্দকার হাসিব, জনমত পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ইসহাক কাজল, সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা সম্পাদক  ও কবি আব্দুল মুনিম ক্যারল, কবি শামিম শাহান, কণ্ঠ প্রবাসের সাদেক আহমেদ সাদী, নাসিমা আলী, আফরোজা আলী, সাহিত্যের কাগজ তৃতীয়ধারার সম্পাদক আকাশ ইসহাক, লেখক ও গবেষক ফারুক আহমদ, কবি মিল্টন রহমান, কবি সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রুম্মান, কবি মাশুক ইবনে আনিস, শিল্পী শাহিনুর হীরক, কবি খাতুনে জান্নাত, কবি ও ছড়াকার সৈয়দ আল ফারুক, কবি মাসুদা ভাট্টি সহ অনেকেই।। সংহতি গত তিন মাসে তৃতীয়বাংলার কবিদের মধ্য থেকে বের করে নিয়ে এসেছে সৃজনশীল অনেক কবি ও সাহিত্যিকদের। আড্ডায় আড্ডায় প্রলুব্ধ সংহতির শরীর ও মনে আশার জোয়ার। সংহতি সার্থক ভাবে খুঁজে নিয়ে এসেছে তার যোগ্য উত্তরাধিকারী ও উত্তরসূরিদের। আড্ডাতো নয় যেন প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত জয়ধ্বনি। কবিতা উৎসব অমর হোক। এই প্রথম বারের মত যুক্তরাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে সংহতি কবিতার দ্বার উন্মোচন করে উৎসবের আয়োজন করছে। আর এই উৎসবে আজ বিভিন্ন জায়গা থেকে উপস্থিত হয়েছেন বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান ও প্রতিশ্রুতিশীল কবি, সাহিত্যিক। সংহতি সকলের উপস্থিতি ও উদ্দীপনায় গর্বিত।
সংহতি বরাবর তার কর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সকল প্রতিবন্ধকতার ঊর্ধ্বে অবস্থান বলেই ইন্দ্রিয়ের নির্যাস বিকাশে অর্ন্তলগ্ন দাবী মেটাতে শৈল্পিক প্রতিশ্রুতিতে ধাবমান। বিলেতের সাহিত্য, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে যে সাড়া আর প্রতিশ্রুতির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে তার গতি ধরে রাখতে পারলেই সংহতির আয়োজন সার্থক ও প্রতীয়মান হবে। কবিতা উৎসবকে সামনে রেখে সংহতি দায়িত্ব নিয়েছে দু’জন কবি ও সাহিত্যিককে বিলেতের বাংলা সাহিত্যে তাঁদের বিরল অবদানের মূল্যায়ন ও সম্মান স্বরূপ সংহতি আজীবন সম্মাননা পদক ও সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৮ ঘোষণা করছে।
সংহতি বাংলা কবিতা উৎসবকে উৎসর্গ করেছে বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান প্রয়াত কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার স্মরণে। এই ক্ষণজন্মা কবি আজ আমদের মধ্যে নেই কিন্তু তাঁর রচিত শব্দের বিশাল সাহিত্যভান্ডার রেখে গেছেন, যা আমাদের বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারকে হারিয়ে আজ আমরা শোকাহত। কবিকে আমরা তার যোগ্যতার বিবেচনায় কতটুকু সম্মান দেখাতে পারবো সে বিচার না করে তাঁকে আমাদের হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার বিনিময়ে অকৃত্রিম সম্মান ও স্বীকৃতি স্বরূপ সংহতি মরণোত্তর সম্মাননা পদক ঘোষণা করছে।
শব্দের যাদুকরী স্পর্শে  এবং বাংলা সাহিত্যে যার লেখনশৈলী, কথা ও শব্দের ব্যঞ্জনায় বিমোহিত করে রেখেছে সর্বস্তরের পাঠকহৃদয়, যার কলমের শ্পর্শে উদ্বেলিত বিশ্ববাঙালি। সেই শক্তিশালী কলমযোদ্ধা আব্দুল গাফফার চৌধুরী কে সংহতি আজীবন সম্মাননা প্রদানের ঘোষণা করছে। তাছাড়া বিলেতে বসে যারা বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা করছেন এবং বাংলা সাহিত্যে তাদের মূল্যবান অবদান রাখছেন, তারা অবশ্যই সম্মান বা স্বীকৃতি পাবার যৌগ্যতা রাখেন। একান্ত নীরব প্রচারবিমুখ একজন কবি বিলেতের বাংলা সাহিত্যে শব্দের রূপকার হিসাবে নিরলস ভাবে কবিতার শরীরকে অলংকৃত করছেন সে রকম একজন কবিকে বিবেচনায় রেখেই কবিতার জন্য সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৮, কোন দ্বিধা ছাড়াই কবি আতাউর রহমান মিলাদ-কে সম্মান প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলা কবিতা উৎসবে উপস্থিত আমাদের পাঁচজন অতিথিদের মধ্যে কবি রফিক আজাদ, কবি বেলাল চৌধুরী ও কেতকী কুশারি ডাইসন-কে সংহতি গুণীজন সম্মাননা পদক ২০০৮ প্রদান ও কবি সৈয়দ আল ফারুক এবং  কবি মুস্তাফিজ শফিকে বিশেষ সম্মাননা পদক ২০০৮ প্রদানের মাধ্যমে সংহতি তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান, অভিনন্দন, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে। একজন লেখক বা কবিকে সম্মান জানানো বা তাঁকে মূল্যায়ন করা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন ও দুরহ কাজ। বিলেতের বাংলা সাহিত্যে এই সম্মান অবশ্যই একটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বাংলা কবিতা উৎসবকে সফল করার পিছনে উৎসব কমিটির সদস্য সহ বিজ্ঞাপন ও প্রচার কাজে সহযোগিতা করেছে বিলেতের প্রতিটি বাংলা কাগজ পরিবার বিশেষ করে সুরমা, জনমত, পত্রিকা, নতুনদিন, ইউরো বাংলা, বাংলা পোস্ট, চ্যানেল আই, , বাংলা টিভি, এটিএন বাংলা, চ্যানেল এস, মাহি এন্ড কোম্পানি ও সি এম মিডিয়া উল্লেখযোগ্য। তাছাড়াও সাপ্তাহিক সুরমা অফিসে সংহতির ২/৩ টি সভার আয়োজন করতে সহযোগিতা করার জন্য সংহতি পরিবার তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ এবং দায়বদ্ধ।। আজ নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে পারি সংহতি তার লক্ষে পৌছতে অবশ্যই সক্ষম হবে।
সংহতি বাংলা কবিতা উৎসব ২০০৮, লন্ডন উপলক্ষে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছে আর সে দায়িত্ব পালন ও সফল করার পেছনে কাজ করেছেন অনেকেই। বিশেষ করে সংহতি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যসহ, কবিতা উৎসব কমিটির বেশ কিছু কর্মিরা যারা দিনরাত পরিশ্রম করে উৎসবকে সমৃদ্ধ করার লক্ষে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনা, অর্থ সংগ্রহ, বিজ্ঞাপন ও  প্রচার  কাজে নিজেদের নিবেদিত করেছেন; তাদের অনেকের মধ্যে ফারুক আহমেদ রনি, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, সাঈম চৌধুরী, আবু মকসুদ, আমিনা আলী, সামসুল জাকি স্বপন, ইকবাল হোসেন বুলবুল, নোমান চৌধুরী, খাতুনে জান্নাত, আবু তাহের, শামিম শাহান, আহমেদ ময়েজ, হেলাল উদ্দিন, গোলাম কবির, আব্দুল কাইয়ুম, সামছুল হক এহিয়া, রেজুওয়ান মারুফ, দিলু নাসের, কাদের মাহমুদ, মঞ্জুলিকা জামালী, শিহাব শাহরিয়ার (বাংলাদেশ), জিয়া উদ্দিন (বাংলাদেশ), নজরুল আলম আনাই, শামছুল আলম শাহ আলম, আব্দুল মুনিম ক্যারল প্রমুখ।
কবিতা উৎসবের মূলবাণী হচ্ছে শান্তির জন্য কবিতা। হানাহানি আর যুদ্ধের দামামা বাজানো বিশ্বের এই কঠিন সময়ে কবিতায় আমরা বলবো শান্তির কথা। আমরা কারো পক্ষে নই। আমরা শান্তির পক্ষে। উৎসব উদ্বোধনের শুরুতে তাই আমরা অবাধ আকাশে উড়িয়ে দেবো শান্তির শ্বেত কপোত। জানিয়ে দেবো শান্তির পক্ষে আমাদের শক্ত এবং সরব অবস্থানের কথা।
গত কয়েকটি সপ্তাহ ধরে এক অনাবিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে কবিতা উৎসব কমিটির প্রত্যেক সদস্য সকল ক্লান্তি উপেক্ষা করে উৎসবকে প্রাঞ্জল করার অভিপ্রায় নিজেদের আত্মত্যাগে উৎসর্গ করেছেন বলেই আজ আমরা এখানে উপস্থিত হতে পেরেছি। গ্রন্থটিকে বিলেতের লেখক ও কবিদের লেখা নিয়ে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত আপনাদের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। সংহতি কবি, শুভানুধ্যায়ী, স্পন্সর ও পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। স্মারকগ্রন্থের শেষাংশে আমাদের সম্মানিত পৃষ্ঠপোষক, স্পন্সর ও বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ও ব্যক্তিগত নামের তালিকা সংযোজিত করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে বলা যেতে পারে উৎসবকে কেন্দ্র করে বিলেতে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে এক নতুন প্রাণের পরশ লেগেছে। উৎসবকে সত্যিকার উৎসবে পরিণত করতে কারোরই উৎসাহের কমতি নেই। এখানে বিশেষ ভাবে কারো নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ে না, বরং প্রত্যেকেরই অংশগ্রহণ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। নিবন্ধটিতে অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি, সেটির মানে নয়, তাদের সহযোগিতার কথা আমরা ভুলে গেছি। প্রত্যেককেই সংহতির বুকে আমরা জায়গা দিয়েছি। তাদের সহযোগিতার কথা আমরা সব সময় পরম কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবো।
ফারুক আহমেদ রনি
বাংলা কবিতা উৎসব ২০০৮, লন্ডন
Read more: http://poetryfestival.webnode.com/about-us/

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান